আমাদের অভ্যাসটা বেঁকে গেছে


আমাদের অভ্যাসটা বেঁকে গেছে



মোবাইল স্ক্রলিং করে আঙুল বেঁকে যাওয়ার ঘটনাটা হয়তো আমরা অনেকেই জানি। চীনের হুনান প্রদেশের চাংসাইতে ঘটেছিলো ঘটনাটি। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বর্তমান তরুন প্রজন্মকে, মাথা নিচু, আঙুল বাঁকা, ঘাড় টেরা, পিঠ বাঁকা ইত্যাদি প্রজন্ম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। করাটাই স্বাভাবিক বটে। বাস্তবিকভাবে বলতে গেলে নিঃসঙ্কোচে বলতে হয়, আমরা যারা তরুণ আছি, আমাদের ঘাড়, পিঠ, আঙুল, কিংবা গলা বেঁকে না যাক, আমাদের অভ্যাসটা বেঁকে গেছে। এবং অকেজো অভ্যাসের কসরত করছি প্রতিনিয়ত। আমার বাস্তবিক মূল্যায়নের এক পংক্তি ব্যাখ্যা করতে চাই এইভাবে। তরুণদের সকাল হয় দুপুর ১২ টায়। অর্থাৎ, অকাজে রাত ২ টা ৩ টা পর্যন্ত জেগে থাকার দরুন, দুপুরটাই বর্তমান তরুণদের মিত্র হয়ে গেছে। 

২০১৩ সালের দিকে বাংলাদেশে স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। আমার গবেষণা ভুল হতেও পারে। তবে, এই সময়ের মধ্যে যে স্মার্টফোন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে একটা নেশার জট পাকিয়েছিল সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সেই সময় প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে সামর্থ্য অনুযায়ী স্মার্টফোন কিনেছেন অনেকেই। কিনেছেনও অনেক চড়া দামে। তবে, ব্যবহারকারীর মধ্যে তরুণদের সংখ্যায় বেশী। এবং স্মার্টফোনের দাম হাতের নাগালে থাকার কারণে দিনে দিনে এই বেড়ে যাওয়ার সংখ্যাটা দিগুণ হয়ে যাচ্ছে। 

২০১৫ সালের ১৬ই আগস্ট, দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত বাংলাদেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বলা হয়েছিল ৪২ শতাংশ। অর্থাৎ, আমার ধারণামতে এই ৪২-এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ ব্যবহারকারীই হচ্ছে তরুণ। প্রযুক্তিনির্ভর হতে গিয়ে আজ আমরা অনেক কিছুই হারাতে বসেছি। কারো সাথে কথা বলার সময় মোবাইল স্ক্রলিং, হাঁটার সময় মোবাইল স্ক্রলিং, সাময়িক বিরাম নেওয়ার সময় মোবাইল স্ক্রলিং, ফেইসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি। যোগাযোগের প্রয়োজনে ক্রয়কৃত মোবাইলও যে হয়ে গেছে ভার্চুয়াল! এতে করে, আমাদের জীবনযাপনের, তদতিরিক্ত পরিবর্তন ঘটছে। এবং এই প্ৰতিবর্তন সংযোজিত হচ্ছে ইচ্ছাকৃত এবং অনিচ্ছাকৃত, দুই ভাবেই। এই সংযোজনটা আমাদের জীবনে কালসদৃশ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যখন তখন মোবাইল স্ক্রলিং-এর কারণে, দীর্ঘদিন পর ছুটিতে গ্রামে গিয়েও বন্ধুদের সাথে মিলনস্থানেও স্ক্রলিং-এর বিষয়টি চোখে পরার মতো। সুখ দুঃখের কথা  সহভাগিতা করা হয়ে ওঠেনা সময় সিনকীর্ণতার কারণে। সময় সংকীর্ণতার কথা বলছি এই কারণে, হাতে মোবাইল থাকার কারণে, আমাদের অভিনিবেশ থাকে বন্ধুদের সাথে কথা বলার দিকে নয়, বরং , মোবাইল স্ক্রলিং-এর দিকে। এতে করেই সময় সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে, সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে বন্ধুত্ব।

অহেতুক রাত জাগার কারণে আমাদের মেজাজ হয়ে যাচ্ছে খিটখিটে। আমরা অল্পতেই রেগে যায়। যেটা সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি করছে। এবং, বাস্তবিকভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যের অনুভব করতে হচ্ছে।  উত্তম সময় নষ্ট করছি। সময়েরসদ্ব্যবহার না করে হেলায় খেলায় কাটিয়ে দিচ্ছি জীবন। সময়ের যথাযথ ব্যবহার করতে অপারগ হচ্ছি। অথচ, আমরা একবারের জন্যেও ভাবছিনা যে, সময় কিন্তু, আমাদেরকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ছুটে চলেছে তার আপন গতিতে। যেটা আর কখনও প্রত্যাবর্তন করবেনা। 

তাই, আমাদের জীবনযাপনে যথোচিত প্ৰতিবর্তন আনার চেষ্টা করতে হবে। তবে, বাজে অভ্যাসের থেকে, বেশ কিছু অভ্যাস নিবর্তনের দিকে নজর দিতে হবে আমাদের। আর এভাবেই, বেঁকে যাওয়া অভ্যেস থেকে পরিত্রান পাবো, এবং আমাদের জীবনে আসবে সন্তোষজনক পরিবর্তন। 

কোন মন্তব্য নেই

Jason Morrow থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.