সম্পদ্শালীতা মানুষের ক্ষুধাকাতর হৃদয়টার পক্ষাবলম্বন করছে বহুগুণে!

বেশিদিন হয়নি, অগোছালো জীবনটাকে গোছানোর প্রয়াসে শুক্রাবাদে নতুন মেসে উঠেছি। এতদিন ছিলাম বারিধারায়। জীবিকার তাগিদে স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে বহুবার। এই বছর ফার্মগেট, তো পরের বছর বারিধারা। এভাবে জীবন অতিবাহিত করতে করতে, নিজের অস্তিত্বকেই হারিয়ে ফেলতে বসেছিলাম। অবশেষে, নতুন ঠিকানায়, নতুন উদ্যমে।

সম্পদ্শালীতা মানুষের ক্ষুধাকাতর হৃদয়টার পক্ষাবলম্বন করছে বহুগুণে!
তবে, শুক্রাবাদে থাকা, এটি নিয়ে আমার দ্বিতীয়বার। ভার্সিটি জীবন শুরু করেছিলাম ঠিক এই জায়গায় থেকে। ২০১২ সালের কথা। আগে যেমন দেখেছিলাম, ঠিক তেমনি রয়ে গেছে সব। নতুন নতুন দোকানপাট, বড় বড় বিল্ডিং করে, জায়গাগুলো হয়ে গেছে আরো বেশি সরু। খ্যানখেনে এই জায়গায়, দাঁড়িয়ে চা পান করতেও জায়গা সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রাখতে হয় এখন। মাঝেমধ্যে, জায়গা সংকীর্ণতার কারণে, দাঁড়িয়ে চা পান করার সময়, হাত থেকে চায়ের কাপ পরে যাওয়ার উপক্রম হয়। একদিন ঘটেওছিল এমন একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। ভাগ্যিস, চায়ের কাপটা মাটিতে পরে গিয়ে ভেঙে যায়নি। ভেঙে গেলে হয়তো, কাপের টাকাটা গচ্চা যেত !

সে যাইহোক, দাঁড়িয়ে চা খাওয়ার কথা বলছিলাম। স্বভাবতই, রাতে ভাত খাওয়া শেষ করে চা খাওয়ার অভ্যাস আমার।  শুক্রাবাদে আসার কয়েকদিন পরেই রাতে ভাত খাওয়া শেষ করে বাইরে গেলাম চা খেতে। জায়গা সংকীর্ণতার কারণে, একটু দূরে গিয়ে মোবাইল স্ক্রলিং করতে করতে চা খাওয়া শুরু করলাম। হঠাৎ, কোত্থেকে যেনো একটা লোক এসে আমাকে ধমক দিয়ে বললো, “চা খাবেন তো অন্য জায়গায় গিয়া খান, এইডা চা খাওয়ার জায়গা না”। আমি অবাক হয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। দেখলাম, লোকটা একটা মুদির দোকানে কিছু জিনিসপত্র বুঝিয়ে দিয়ে আমি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, ঠিক সেই জায়গাটায় চলে এলেন। তখনোও আমি ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমিও জেদ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। মনে মনে বলতে থাকলাম, লোকটার কি সমস্যা! পরোক্ষণে বুঝতে পারলাম, আমি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, পাশেই একটা লোহার পিলার ছিল, লোকটা সেখানে তার ভ্যানটা বাঁধতে এসেছেন। ওই জায়গাটা ভ্যান রাখার জায়গা। অথচ, এই স্থানে ভ্যানটা রাখার ফলে দুর্ভোগে পড়তে হবে পথচারীদের।

ভাবছি, জায়গার বেশ অভাব পরে গেছে। সুস্থ্য চিন্তাধারার বিস্তর ঘাটটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বর্তমান সম্পদশালী মানুষদের মধ্যে। মাঠ-ঘাট পরিব্যাপন করে তৈরি করা হচ্ছে বড় বড় দালান-কোঠা। এক্ষেত্রে, সম্পদ্শালীতা মানুষের ক্ষুধাকাতর হৃদয়টার পক্ষাবলম্বন করছে বহুগুণে। চাওয়া পাওয়ার পরিমাণটাও মাত্রাধিক্য। অপ্রাচুর্যতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে খেলার মাঠে। খেলার মাঠের অপ্রতুলতার কারণে, বাচ্চারা সুযোগ না পেয়ে খেলছে গ্যারেজে। সজোরে ব্যাট হাঁকালেও গ্যারেজের ছাদ আটকে দেয় ক্রিকেট বল। এভাবেই নিস্তেজ হয়ে যায় লাখো প্রতিভা।

এইতো, কয়েকদিন আগে সন্ধ্যায় চা পান করতে বেরিয়েছিলাম। দেখতে পেলাম কয়েকটি ছেলে ক্রিকেট খেলছে ছোট্ট একটি গ্যারেজে। ব্যাটসম্যান সজোরে ছক্কা হাঁকালো। তবে, বলটা বেশি দূরুত্বে যেতে পারেনি, দেয়ালে লেগে গিয়ে পড়লো পাশে থাকা ময়লা যাওয়ার ড্রেনেজে। সাথে সাথেই বাচ্চাদের মন খারাপ হয়ে গেলো। বাচ্চাগুলো খেলা থামিয়ে যে যার মতো চলে গেলো। হয়তো, এভাবে আরো দশ বারোটা বল চার ছক্কা না হয়ে পরে গেছে ওই ময়লা ড্রেনেজে।

তাই, যেখানে সেখানে পার্কিং কিংবা অবৈধভাবে জায়গা দখল করে চায়ের দোকান বসানো বন্ধ করার ক্ষেত্রে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। পর্যাপ্ত খেলার মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। এভাবেই মানুষের হাঁটাচলায় দুর্ভোগ কমে আসবে, নেমে আসবে স্বস্তি। খেলার মাঠে বাচ্চারা খেলবে খেলোয়ার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। কে জানে, ড্রেনেজে বল পাঠানো সেই বাচ্চাটাই হয়তো হতে পারবে আগামী দিনের সাকিব, মুশফিক কিংবা তামিম!

৫টি মন্তব্য:

Jason Morrow থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.