করোনা ভাইরাস বনাম আমাদের অস্বাভাবিক চলাফেরা

করোনা ভাইরাস বনাম আমাদের অস্বাভাবিক চলাফেরা
করোনা ভাইরাস বনাম আমাদের অস্বাভাবিক চলাফেরা


করোনা ভাইরাস সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নামকরা গণমাধ্যমগুলোর শিরোনামে প্রাধান্য বিস্তার করছে। মরণঘাতী এই রোগে এখন পর্যন্ত সারাদেশে ১০০ জনের অধিক লোক আক্রান্ত হয়েছেন। মরণঘাতী এই রোগে বিশ্বে কতজন প্রাণ হারিয়েছেন সে বিষয়ে নাই বা বললাম। হিসেব করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছিনা। কারণ, দিনকে দিন এই ভাইরাসটি এমনভাবে নাছোড়বান্দা হয়ে যাচ্ছে যে, এটাকে প্রতিরোধ করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এবং মানুষের ঘেঁচড়া এবং অমান্যকারী স্বভাবের কারণে প্রতিদিন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যুর মিছিলে নিজের নাম লেখাচ্ছে। 

এই ভাইরাসটি কতটুকু মরণব্যাধী এটা সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা নেই। কিন্তু, এটিযে প্রাণ নিতে পারে এটা আমার জানা হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। ইউরোপ আমেরিকার মতো দেশগুলোর দিকে তাকালেই দেখতে পাবো, কত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। এইসব তথ্য অবাস্তব নাকি সত্য এইটাও আমাদের জানা নেই। কিন্তু, নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অন্ততপক্ষে নিরাপদে থাকার চেষ্টা করাটাই মুখ্য বিষয়।

মানুষের সংস্পর্শ এড়ানোসহ বেশ কয়েকটি সতর্কীকরণ সংকেত গণমাধ্যমগুলোর (অনলাইন নিউজ, টেলিভিশন, ফেইসবুক) ইত্যাদির মাদ্ধমে জানতে পারি। কিন্তু, মানুষের গা ছাড়া ভাবটাই মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই ভাইরাসটি কতটুকু সর্বনাশা এক মরণব্যাধী, দেশের মানুষ তখনোও অনুধাবন করতে চেষ্টা করেনি। অতএব, যার পরিনাম এখন দিতে হচ্ছে। করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বেশ কিছু এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরোনোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাঁচাবাজার, এবং মুদি দোকান ছাড়া অন্য যেকোনো শপিংমল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ছাড়া যেকোনো ধরণের কর্পোরেট অফিস বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

এখনতো মুদিপণ্য কিনতেওতো বাইরে যেতে হচ্ছেনা। বেশ কয়েকটি অনলাইন প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে মুদিপণ্য অর্ডার করলেই বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে। শহরবাসীর সুবিধার কথা ভেবেই অনলাইন কোম্পানিগুলো খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু না, এতো সুবিধা নেওয়ার মানুষ আমরা না। বাইরে বের হতেই হবে, দাঁড়িয়ে আড্ডা দিতেই হবে, একটা সিগারেট ভাগ করে খেতেই হবে। আমরা মানুষরা সরকারের নির্দেশগুলোর প্রতি এতোই অবিনয়ী যে, আমরা এখনো বাইরে বের হচ্ছি, আড্ডা দিচ্ছি।

বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বের ঘনবসতি দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। ঢাকা শহরের কথায়ই বলি। মানুষ যেভাবে এখনো দলবদ্ধ হয়ে মাস্কছাড়া দলবদ্ধ হয়ে রাস্তার গলিতে দাঁড়িয়ে গল্প করছি, করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে মারা যেতে আমাদের বেশি সময় লাগবেনা। 

গত কয়েকদিন আগের কথা। আমি যে বাসায় থাকি, সেখান থেকে কয়েকমিনিট দূরত্বে একটি মুদির দোকান আছে, যেখান থেকে আমি প্রায়ই মুদিপণ্য ক্রয় করে থাকি। বাসায় বসে কাজ করেছি সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। বিশেষ প্রয়োজনে আমার স্ত্রী আমাকে দোকানে পাঠালো। ইচ্ছে না থাকা সত্যেও যেতে হলো। মানুষের সংস্পর্শ এড়ানোর জন্য সেনাবাহিনী কর্তৃক মার্ক করা স্থানে আমরা বেশ কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু, কোত্থেকে একটা লোক এসে আমাদের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পরলো। লোকটার দিকে রাগের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। কিছু বলার সাহস হয়নি। দেখলাম লোকটা মাস্ক পরিধান করেননি । তবে, ওপর পাশে থাকা লোকটা উনাকে মাস্ক পরিধান করতে বলছেন। কিন্তু উনি শুনেও না শুনার ভান করছিলেন। পরক্ষনেই উনাকে বেশ কয়েকবার ধমক দিয়ে মাস্ক পরিধান করতে বাধ্য করেছিলেন। 

আমার এই অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে সহভাগিতা করার কারণ একটাই, আমরা এতটাই ঘাড়ট্যারা মানুষ যে, অনুরোধ করার পরেও সরকারের নির্দেশ মানতে নারাজ। নিজের মতো করে চলছি, বাইরে বেরোচ্ছি, আড্ডা দিচ্ছি। এমনটা হলে আমরা মানুষরা বাঁচবোনা, বাচঁবেনা দেশ। 

তাই, চলুন এই ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের নির্দেশ মেনে চলি, সাময়িক সময়ের জন্য হলেও ঘরে থাকি। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করি, এবং ভাইরাস সংক্রমণ রোধ করি। 




কোন মন্তব্য নেই

Jason Morrow থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.