রোজা রাখার বিষয়ে খ্রিষ্টান ধর্মে যা বলা হয়েছে!


রোজা রাখার বিষয়ে খ্রিষ্টান ধর্মে যা বলা হয়েছে!



আমরা যারা বাংলাদেশে বসবাস করছি, আমরা সবাই রোজা সম্পর্কে বেশ ভিন্নধরণের ধৃতি লাভ করেছি। কারণ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর পরিসংখ্যান মতে, ২০১৮ সালের ১ লা জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার (সূত্রঃ যুগান্তর) । আর, মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮৮ ভাগই মুসলিম ধর্মে বিশ্বাসী এবং, মুসলিম ধর্মের তদনুসারে একজন সবল মুসলমানের জন্য রমযান মাসে রোজা রাখা ফরজ। অতএব, রমযান মাসে প্রত্যেক মুসলমান রোজা রেখে আত্মসচেতন থাকতে দৃঢ় সচেষ্ট থাকে। আর তাই, রমযান মাসে মুসলিম ভাই বোনদের রোজা রাখার বিষয় সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত আছি। তো, আজকে খ্রিষ্টান ধর্মে রোজা রাখার বিষয়ে এবং এই সময় পালনীয় রোজার বিভিন্ন অধ্যাপনা সম্পর্কে জানবো। এই লেখাটি তাদের জন্যে, যারা খ্রিষ্টান ধর্মের রোজা রাখার বিষয় সম্পর্কে জানেন না।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ভাগ মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী। এই রোজা রাখার বিষয়টি খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও বিদ্যমান রয়েছে। মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা যেটিকে ‘রোজা’ বলে থাকেন, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা সেটিকে ‘উপবাস’ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। যীশু মোট চল্লিশদিন উপবাস (রোজা) থেকেছিলাম, যেটি ছিল ঐশ্বরিক। আর এটিকে পক্ষাবলম্বন করেই যিশুর অনুসারীরা ইস্টার সানডে-এর আগ মুহূর্তে ৪০ দিন রোজা (উপবাস)  থাকেন।

রোজা (উপবাস) থাকার বিষয়টিকে খ্রিষ্টান ধর্মে দুইভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথমটি হছে আধ্যাত্মিক, এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে বাহ্যিক। আধ্যাত্মিক বিষয়ের মধ্যে রয়েছে আত্মশুদ্ধির জন্যে নিয়মিত প্রার্থনা করা, সংযমী হওয়া, প্রতিহিংসা দূর করা, শত্রুকে ভালবাসা এবং পরোপকার করা। আর বাহ্যিক দিকগুলোর মধ্যে, মাংসাহার ত্যাগ, অতিরিক্ত খরচ কমিয়ে গরিব লোকদের দান করার বিষয়গুলো বেশ প্রাধান্য পেয়েছে।
খ্রিষ্টান ধর্মে রোজা রাখার বিষয়ে কাউকে বাধ্য করা হচ্ছেনা। উপবাস (রোজা) থাকতে পারবে এমন কেউ চাইলেই থাকতে পারবে। যদি কেউ উপবাস (রোজা) থাকতে চায়, তাহলে সে উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোর অনুবর্তী হবে।

বাইবেলেনতুন নিয়মে (New Testament)-এ উপবাসকালে (রোজা)-এর সময় গরীবদের দান করা প্রসেঙ্গে বলা হয়েছে এইভাবে যে, তোমরা উপবাস থেকো, এবং গরিব-দুঃখিদের সাহায্য করো। কিন্তু, তুমি যখন ভিক্ষা দাও, তোমার ডান হাত যে কি করছে, তোমার বাঁ হাত যেন তা জানতে না পারে, যাতে তোমার ভিক্ষাদান গোপন থাকে; তবে যিনি গোপন সবকিছু দেখেন, তোমার সেই পিতা তোমাকে প্রতিদান দেবেন (মথিঃ৬:৩-৪)”। এর মানে হচ্ছে, উপবাস (রোজা)-এর সময় গরিব এবং অভাবক্লিষ্ট মানুষদের দান করলে তাদের এবং দানকারীর কল্যাণ সাধন হয়, এবং এতে করে ঈশ্বর (আল্লাহ্‌) দানকারীর প্রতি বিশেষ সহানুভূতিশীল হন । তবে, দান করার সময় যাতে কাউকে না দেখিয়ে দান করা হয় এবং, সেটা যেন লোক দেখানো না হয়। কারণ, আল্লাহ্‌ (সৃষ্টিকর্তা)-তো সব কিছুই দেখছেন। তিনি গোপনে সবকিছু দেখছেন এবং এই সাহায্যের প্রতিদান তিনি একদিন দিবেন। অতএব, কাউকে দান করার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের (আল্লাহ্‌) বিশেষ কৃপা এবং অনুগ্রহ লাভ করছি, যেটি মানুষ হিসেবে আমরা আত্মিকভাবেই পেয়ে থাকি।

উপবাস কাল (রোজা)-এর সময় কারো দোষত্রুটি ক্ষমার বিষয়টি বাইবেলের নতুন নিয়মে (New Testament) বিশেষ উল্লেখযোগ্য। কেউ যদি কোন দোষ করে, তাহলে সেটা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখে সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। বাইবেলে লেখা আছে যে, “পরের দোষত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখো। তোমরা যদি পরের দোষত্রুটি ক্ষমা করো, তবে, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা তোমাদের ক্ষমা করবেন। কিন্তু, তোমরা যদি পরকে ক্ষমা না করো, তবে তোমাদের পিতা তোমাদেরও দোষত্রুটি ক্ষমা করবেন না” (মথিঃ৬:১৪-১৫)।  অন্যান্য সময় অপেক্ষা উপবাস কাল (রোজা-রমযানের মাস)-টা সে মুসলিমই হোক, কিংবা খ্রিষ্টান সবার জন্যেই বিশেষ এবং ব্যতিক্রমী একটি সময়। এ সময় নিজের যেমন বিবিধ অপকর্ম, মন্দ স্বভাব, দুষ্কর্ম, অন্যায়াচরণ, এবং অশুভ কাজ প্রশমিত করতে হবে, তেমনি পরের এইসব পাপাচরণ, খারাপ কাজ অপরাধ প্রশমিত করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এবং, ভুল করে যদি কেউ অপরাধ করে বসে, তাহলে তাকে মার্জনা করে সংশোধনের পথ দেখিয়ে দিতে হবে। আর আমরা যদি কারো অপরাধ ক্ষমা না করি, তাহলে ঈশ্বর (আল্লাহ্‌)-ও আমাদের পাপ এবং অপরাধ মার্জনা করবেন না, ঠিক যেমনটি বাইবেলে বলা হয়েছে।

উপবাস কাল (রোজা রমাজনের) সময়ে, খাবার গ্রহণ এবং মাংসাহার ত্যাগ সম্পর্কে বাইবেলের চূড়ান্ত এবং ঐকান্তিক বিষয় এখন তুলে ধরার চেষ্টা করছি। খাবার দাবার গ্রহণে নিজেকে সংযত থাকার কথা বলা হয়েছে বাইবেলে। লেখা আছে যে, “তোমরা আমার নামে উপবাস করো, এবং মাংসাহার ত্যাগ করো। তবে, তোমরা যখন উপবাস করো, তখন মাথায় তেল মেখ ও মুখ ধুয়ো। যেন, কেউই তোমার উপবাস না দেখতে পায়, কিন্তু তোমার পিতা, যিনি সেই গপন স্থানে আছেন, কেবল তিনিই যেন তা দেখতে পায়; এবং, তিনি এর প্রতিদান দিবেন” (মথিঃ৬:১৬-১৮) মানুষ হিসেবে আমরা স্বভাবতই আমরা ভাল-মন্দ খাবার খেতে ভালবাসি। এটা ঠিক যে রোজার সময়, নির্দিষ্ট একটি সময় ধার্য করা থাকে, যখন আমরা খাদ্য গ্রহণ করতে পারি, এবং, এরপর রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত যেটা মন চায় (মাছ, মাংস ইত্যাদি) সেটাই খেতে পারি। কিন্তু, উপবাস কালে (রোজা রমযানের) সময়, মাছ মাংস গ্রহণ রোজার পবিত্রতা কিংবা আধ্যাত্মিক ফলাফল কিঞ্চিৎ পরিমাণ হলেও কমিয়ে দেই। তাই, বাইবেলে উপবাস কাল (রোজা রমযানের)-এর সময় অন্ততপক্ষে মাছ-মাংস ত্যাগ করে অর্থ জমিয়ে সেই টাকা গরীবদের দান করতে বলা হয়েছে। একটা বিষয় আমি আত্মগর্বের সহিত বলতে চাই যে, এটি মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের মাঝেও বেশ লক্ষণীয়। কোন কোন মসজিদে এতিম বাচ্চাদের জন্যে ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়, যেটি অনেক মঙ্গলজনক এবং আল্লাহ্‌ (ঈশ্বরের) কাছ থেকে আশীর্বাদ ও কৃপা পাওয়ার একটি অন্যতম হাতিয়ার। তবে বাইবেলে এও বলা হয়েছে যে, উপবাস (রোজা) রাখার সময় বিষণ্ণতা ভাব না দেখানোর জন্য। বরং, সবসময় সতেজ থেকে একে অপরের সাথে মেলামেশা করার জন্যে। অন্য কেউ যেন জানতে না পারে যে, তুমি উপবাস (রোজা) রেখেছ। কারণ, একজনতো আছেন, যিনি আমাদের কার্যকলাপ পর্যালোচনা করছেন, এবং তিনিই এর প্রতিদান দেবেন।

অতএব, আমরা যে ধর্মেরই হই না কেন, রোজা (উপবাস) থাকার চর্চা করা জরুরী। এটি শুধু আধ্যাত্মিকতায় আমাদেরকে লাভবান করেনা বরং, মানসিক এবং শারীরিক দিক থেকেও বেশ প্রশান্তি নিবাসিত করে। তাই, চলুন, রোজা (উপবাস) থাকি, সংযমী হই, এবং ঈশ্বর (আল্লাহ)’র দেখানো পথে চলি।

কোন মন্তব্য নেই

Jason Morrow থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.