কোথায় বসবো, সিট খালি নাই!


কোথায় বসবো, সিট খালি নাই!


শেওরা রেল গেইট থেকে ধানমন্ডি ছয় নাম্বারে বাসে করে যেতে খুব বেশি একটা সময় লাগেনা। বেশি জোর আধ-ঘণ্টা। তবে একটা কাহিনী আছে! শেওরা থেকে ধানমন্ডির সড়কটা রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ততম সড়কগুলোর মধ্যে অন্যতম। বরাবরই এই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়, এবং দুর্ভোগে পরতে হয় নিরূপায় যাত্রীদের। নিরূপায় বলছি এই কারণে, সেইসময় যাত্রীদের কিছুই করার থাকেনা। কোন উপায় বের করতে না পেরে, অসহায়ের মতোই বসে থাকতে হয় বাসের মধ্যে। আর মনের মধ্যে তীব্র ক্রোধ পুষে রেখে নিরবে গালি দিতে থাকতে হয় সরকারের দূর্বল এবং গরিব পরিবহন ব্যবস্থাকে। পরিবহন ব্যসবস্থার কথা যেহেতু চলেই এলো, সেহেতু মূল প্রসঙ্গে চলে আসি।

খুব একটা প্রয়োজন না হলে, পাবলিক বাসে করে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাতায়াত করতে পছন্দ করিনা। সাইক্লিং করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে দেহের রক্তচাপ কম থাকার কারণে, বেশ কিছুদিন ধরে সাইক্লিং করা থেকে বিরতি নিয়েছি। ইদানীং বাসে করেই যাতায়াত করছি।

বরারের মত আজকেও বাসে করেই অফিস শেষ করে বাসায় ফিরছি। ধানমন্ডি ছয় নাম্বারের মাথায় দশ থেকে পনেরো মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর, প্রত্যাশিত বাসটি চলে এলো। হাত দিয়ে ইশারা করায়, বিন্দুমাত্র বিলম্ব করেনি বাসটি। আমিও চট করেই উঠে পরলাম। ভাগ্য আমার অনুকূলে ছিল বলেই বেশ কয়েকটা সিট খালি পেয়ে বসে পরলাম বাসের চার নাম্বার সাড়িতে। সিট দুটোই খালি। সামনের এবং পিছনের সাড়িতেও বেশ কয়েকটা সিট ফাঁকা ছিল সেই মুহূর্তে। সংসদভবনের গমন পথ পার হওয়ার পরেই আমাদের গতিপথ পনেরো থেকে বিশ মিনিটের জন্যে মনিপুরিপাড়ার ঠিক পাঁচ নাম্বার গেইটের সামনে এসে থেমে গেলো।

রাত তখন পৌনে দশটা। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারো যানবাহনগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, আদৌ কি বাসায় পৌঁছাতে পারবো? সেই মুহূর্তে মনটা অনেক গরিব হয়ে গেছে। ভাবতেই বেশ কষ্ট হচ্ছিলো এই ভেবে যে, আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশে বসবাস করছি, কিন্তু, যানজট নিরসনের ধারাটা এখনও অনেক মন্থরগতিতে চলছে। যখনই নিজে নিজে এর সমাধানের পথ খুঁজতে শুরু করলাম, ঠিক তখনই ক্ষিপ্রগতি কয়েকজন যাত্রী বাসে উঠে পড়লো। তিন চারজন হবে। সবার শেষে এক ভদ্রলোক উঠলেন। উঠেই চারপাশ এক পলক তাকিয়ে দেখলেন। তিনি কোন কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না যে, কোথায় গিয়ে বসবেন! তার পেছনে থাকা বাস হেল্পার তৎক্ষণাৎ চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘জান না, যেকোনো একটা সিটে বসে পরেন। ‘ কিন্তু, ভদ্র লোকটি প্রতি উত্তরে বললেন, ‘কোথায় বসবো, সিট খালি নাই।‘ বাস হেল্পার রেগে গিয়ে বললেন, ‘এখনও তিনটা সিট খালি আছে। তাড়াতাড়ি বসুন, সিটিং বাসে দাঁড়িয়ে থাকার নিয়ম নাই।‘ আমিও খেয়াল করে দেখলাম, সামনে সাড়িতে একটা সিট, পেছনের সাড়িতে আরেকটা সিট এবং চার নম্বর সাড়িতে আমার পাশের সিট, মোট তিনটা সিট খালি। কিন্তু, লোকটি বলছেন যে সিট খালি নেই। কিছুক্ষণ ভাবার পর বিষয়টি অনুধাবন করতে পারলাম। সামনের এবং, পিছনের দুটো সাড়িতে সিট খালি আছে ঠিকই, কিন্তু, সেই দুটো সিটেই বসে ছিলেন দু’জন মেয়ে। আমার পাশের খালি সিটটা উনার চোখে পড়েনি। সামনে এগোতেই আমার পাশের খালি সিটটা দেখে বসে পরলেন। বসেই মেয়েদের পাশে বসার বিড়ম্বনার কথা আমার সাথে সহভাগিতা করতে শুরু করলেন। ‘আরে আর বইলনা, গত সপ্তাহে এক মেয়ের পাশে বসছিলাম, এরপর অনিচ্ছাকৃতভাবে আমার পা, মেয়েটার পায়ে লেগে যায়। মেয়েটা রেগে গিয়ে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। সরি বলার পরেও  মেয়েটা রাগারাগি করা থামায়নি। এরপর আমি বাস থেকে নেমে, আরেকটা বাসে উঠে পড়ি। কি যে ঝামেলা বাবা, মেয়েদের জন্যে আলাদাভাবে সিট বরাদ্দ থাকলে ভাল হইত।‘

ঠিকইতো, পাবলিক বাসে মেয়েদের জন্যে কতগুলোই বা সিট বরাদ্দ আছে! থাকলেই বা কি, সেটাতো আর খালি থাকছেনা। আমার মন্তব্য হচ্ছে, হয় মেয়েদের জন্যে সিট বরাদ্দ বাড়িয়ে সেটা স্থায়ী করতে হবে, অথবা, মেয়েদের জন্যে আলাদা পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এতে করে আমার মনে হয়, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অকাম্য ঘটনা ঘটে যাওয়া হ্রাস পাবে। পাশাপাশি, রাজধানীর তীব্র যানজট নিরসন করতে পারলে, কর্মজীবী মানুষেরা খুব দ্রুত ঘরে ফিরতে পারবে, বিশেষ করে মেয়েরা। রাত করে বাসায় ফেরা মেয়েদের জন্যে অনিরাপদ। তীব্র যানজটের কারণে সৃষ্ট নিষ্প্রাণ এই সময় ঘটাতে পারে মেয়েদের জীবনে সৃষ্টি করতে পারে এক কালো অধ্যায়।

অতএব, এই অনুচ্ছেদে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে দুটো বিষয়বস্তুর উপর, প্রথমটি হচ্ছে যানজট নিরসন, এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে মেয়েদের জন্যে সিট বরাদ্দ এবং স্থায়ীকরণ। এই দুটি বিষয়ের উপর বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আশা এবং বিশ্বাস করি, মেয়েদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে । 

২টি মন্তব্য:

Jason Morrow থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.